অনলাইন সীমান্তবাণী ডেস্ক : পশ্চিমবঙ্গ সরকারের অংশগ্রহণ ছাড়া তিস্তা এবং গঙ্গার পানি বণ্টন নিয়ে বাংলাদেশের সঙ্গে ভারতের যে কোনো চুক্তিতে তীব্র আপত্তির কথা জানিয়েছেন, পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা ব্যানার্জি। গতকাল সোমবার তার আপত্তির কথা জানিয়ে ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদিকে চিঠি পাঠিয়েছেন। এদিকে গতকাল পশ্চিমবঙ্গের প্রশাসনিক ভবন নবান্নে মমতা বলেন, ‘আমি বাংলাদেশকে ভালোবাসি, কিন্তু পশ্চিমবঙ্গের স্বার্থ বাদ দিয়ে নয়, পশ্চিমবঙ্গের মানুষের স্বার্থ নিয়ে কোনো আপস করব না।’
নরেন্দ্র মোদিকে লেখা চিঠিতে মমতা বলেন, বাংলাদেশের সঙ্গে ভৌগোলিকভাবে আমাদের ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক রয়েছে। আমি সেখানকার মানুষ এবং সংস্কৃতিকে শ্রদ্ধা করি। অতীতে বিভিন্ন বিষয়ে পশ্চিমবঙ্গ বাংলাদেশকে সহযোগিতা করেছে। ছিটমহল থেকে শুরু করে দুই বাংলার রেল ও বাস সংযোগ বাড়াতে আমরা দ্বিপাক্ষিক সম্পর্কের ক্ষেত্রে সহযোগিতা করেছি। তবে পানিই জীবন। আমরা এ নিয়ে কোনো আপস করতে পারি না। গঙ্গা এবং তিস্তার পানি বণ্টন নিয়ে বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে হয়তো আপনার কিছু আলোচনা হয়েছে। কিন্তু পশ্চিমবঙ্গ সরকারের মতামত না নিয়ে এমন একতরফা আলোচনা কাঙ্ক্ষিত বা গ্রহণযোগ্য নয়। বাংলাদেশের সঙ্গে ১৯৯৬ সালের ইন্দো-বাংলা ফারাক্কা চুক্তির ফলে পশ্চিমবঙ্গের অনেক ক্ষতি হয়েছে। কলকাতা বন্দরের নাব্য অনেক কমেছে।
social
তিনি বলেন, গত ২০০ বছরে গঙ্গা-পদ্মার প্রবাহে অনেক বদল হয়েছে। এর কারণে জলঙ্গী ও মাথাভাঙা নদী পদ্মা থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে গেছে। এর প্রভাব পড়েছে সুন্দরবনে। অনেক ছোট হয়ে গেছে সুন্দরবন। ফারাক্কা বাঁধ নির্মাণের কারণে ভাগীরথী নদী গঙ্গা থেকে বিচ্ছিন্ন হয়েছে। ফারাক্কা ব্যারেজের কারণে পশ্চিমবঙ্গের অনেক ক্ষতি হয়েছে। এ নিয়ে বিভিন্ন সময়ে ভারত সরকারকে চিঠি দেওয়া হয়েছে।
তিনি বলেন, জানতে পেরেছি যে, বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে তিস্তা নিয়ে আলোচনা হয়েছে। কিন্তু সিকিমে একাধিক জলবিদ্যুৎ প্রকল্পের কারণে তিস্তা নদী ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। পরিবেশগত বদল এসেছে। ঐ বৈঠকে ভারত সরকার বাংলাদেশের তিস্তা অংশে কিছু সংস্কারের প্রস্তাব দিয়েছে। এতে আমি বিস্মিত। জলবিদ্যুৎ প্রকল্পের পর ভারতের অংশে তিস্তার কোনো সংস্কার করা হলো না। এর কারণে প্রতি বছর তিস্তায় পানিপ্রবাহ কমে যাচ্ছে। সংস্কার না করে যদি বাংলাদেশকে তিস্তার পানির হিস্যা দেওয়া হয়, তাহলে পশ্চিমবঙ্গের উত্তরের জেলাগুলোর লাখ লাখ মানুষ পানির অভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হবে। সেচের পানি পাওয়া যাবে না। এমতাবস্থায় বাংলাদেশকে তিস্তার পানি দেওয়া কোনোভাবে সম্ভব নয়।
চিঠির শেষাংশে তিনি বলেন, পশ্চিমবঙ্গ সরকারের সঙ্গে আলোচনা না করে কোনো মতেই ফরাক্কা চুক্তির নবায়ন এবং তিস্তার পানি বণ্টন চুক্তি করা যাবে না।
Leave a Reply